কৃষণ চন্দরকৃষণ চন্দর


কৃষণ চন্দর জন্মেছিলেন ১৯১৪ সালের ২৬ নভেম্বর তৎকালীন অবিভক্ত ভারতবর্ষের পশ্চিম পাঞ্জাবের গুজরানওয়ালা জেলার ওয়াজিরাবাদ নামক এক ছোট শহরে। যদিও তিনি এক চিঠিতে তাঁর জন্মস্থান লাহোর বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর পুরো নাম কৃষণ চন্দর শর্মা। জন্মসূত্রে তিনি কাশ্মীরী ব্রাহ্মণ। তাঁর পিতা ছিলেন কাশ্মীরের ভরতপুর নামক এক ছোট রাজ্যের স্বনামধন্য চিকিৎসক। কৃষণ চন্দরের প্রথম প্রকাশিত গল্প-সংকলন ‘তিলিসম্-এ-খেয়াল’। প্রথম উপন্যাস ‘শিকস্ত’, এটি রচনা শুরু হয় ১৯৪০ সালে। বস্তুত, প্রথম গল্প থেকেই কৃষণ চন্দরের মানবতাবাদী সেক্যুলার দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশিত হয়েছে। এরপর তিনি একে একে অজস্র গল্প ও উপন্যাস লিখে উর্দু এবং হিন্দি সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে তোলেন। সারা ভারতেই তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। বাংলা ও ভারতীয় বিভিন্ন ভাষা ছাড়াও রুশ, জার্মান, ইংরেজি, চেক, হাঙ্গেরি, পোলিশ, চীন ও জাপানি ভাষায় তাঁর সাহিত্য অনূদিত হয়েছে। উর্দু ও হিন্দি ভাষায় তাঁর ৩০টি ছোটগল্প সংকলন এবং ২০টি উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে। কৃষণ চন্দরের গল্পগ্রন্থগুলির মধ্যে ‘তিলিসম্-এ-খেয়াল’, ‘টুটে তারে’, ‘পুরানে খুদা’, ‘অন্নদাতা’, ‘তিন গুন্ডে’, ‘অজন্তা সে আগে’, ‘নয়ে আফসানে’, ‘মজাহিয়া আফসানে’, ‘মিস নৈনিতাল’, ‘কাশ্মীর কি কহানী’, ‘নয়ে গুলাম’, ‘কিতাব কা কফন’, ‘কালা সুরাজ’, ‘হম্ বহশী হ্যাঁয়’ ইত্যাদি উলেস্নখযোগ্য। তাঁর উপন্যাসগুলোর মধ্যে ‘শিকাস্ত’, ‘যব খেত জাগে’, ‘গদ্দার’, ‘কাগজ কি নাও’, ‘কাগজ কি নাও’, ‘কার্নিওয়ালা’, ‘বাওন পাত্তে’, ‘আয়নে একেলে হ্যাঁয়’, ‘আধা রাস্তা’, ‘তুফান কি কালিয়াঁ’ প্রভৃতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। শিশুদের জন্য রচিত ‘দাদর পুলকে বাচ্চে’, ‘লাল তাজ’, ‘উল্টা দরখ্ৎ’, ‘চিড়িয়া কি আলিফ লায়লা’ শিশু-সাহিত্যের সীমানা ছাড়িয়ে মহৎ সাহিত্যের মর্যাদা লাভ করেছে। এছাড়া রয়েছে তাঁর শৈশব স্মৃতিচারণমূলক রচনা ‘ইয়াদোঁ কি চিনার’। ‘দরওয়াজা’ তাঁর উল্লেখযোগ্য নাটিকা সংকলন। তাঁর রম্যরচনা সংকলনগুলির মধ্যে ‘দেওতা আওর কিষাণ’, ‘নজারে’, ‘এক গাদ্ধে কি সর্গুজাশ্ৎ’ বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে। তাঁর রম্যরচনাগুলি একাধারে হাস্য-কৌতুক ও ব্যঙ্গ-বিদ্রূপে সমুজ্জ্বল। তীক্ষ্ণ ছুরির ফলার মতো সেগুলি পাঠকের চোখের সামনে ঝলসিয়ে ওঠে।