আবুল কালাম আজাদআবুল কালাম আজাদ


আবুল কালাম মহিউদ্দিন আহমেদ (১১ নভেম্বর ১৮৮৮ - ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৮) ছিলেন একজন বিশিষ্ট ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী ও স্বাধীন ভারতের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী। তিনি মৌলানা আবুল কালাম আজাদ (তাঁর ছদ্মনাম ছিল আজাদ) নামেই অধিক পরিচিত। মৌলানা আজাদ ইসলামি ধর্মশাস্ত্রে সুপণ্ডিত ছিলেন। তরুণ বয়সে তিনি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। তিনি হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির প্রবক্তা ছিলেন এবং দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত বিভাগের বিরোধিতা করেছিলেন। এমনকি নবগঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রে সামরিক শাসন ও পাকিস্তান ভাগ সম্পর্কেও তিনি ভবিষ্যবাণী করে গিয়েছিলেন। ১৯৯২ সালে তাঁকে ভারতের সর্বোচ্চ সম্মান ভারতরত্নে (মরণোত্তর) ভূষিত করা হয়। স্বাধীন ভারতে শিক্ষাবিস্তারে তাঁর উজ্জ্বল ভূমিকার কথা স্মরণে রেখে তাঁর জন্মদিনটি সারা দেশে "জাতীয় শিক্ষা দিবস" হিসেবে পালন করা হয়। তরুণ বয়স থেকে মৌলানা আজাদ উর্দু ভাষায় কবিতা এবং ধর্ম ও দর্শন-সংক্রান্ত নিবন্ধ রচনা করতে শুরু করেন। তিনি সাংবাদিকতার পেশা গ্রহণ করে ব্রিটিশ শাসনের সমালোচনা করেন এবং ভারতীয় জাতীয়তাবাদকে সমর্থন জানান। পরে আজাদ খিলাফৎ আন্দোলনের নেতৃত্ব দান করেন। সেই সময় তিনি মহাত্মা গান্ধীর সংস্পর্শে আসেন। আজাদ ১৯১৯ সালের রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে গান্ধীজির অহিংস অসহযোগের ধারণায় অনুপ্রেরিত হয়ে অসহযোগ আন্দোলন সংগঠনে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। ১৯২৩ সালে তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনিই ছিলেন কংগ্রেসের সর্বকনিষ্ঠ সভাপতি। ১৯৩১ সালে মৌলানা আজাদ ধারাসন সত্যাগ্রহ শুরু করেন। এই সময় তিনি দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক নেতা হয়ে ওঠেন। তিনি ভারতে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতান্ত্রিক ধ্যানধারণা এবং হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতির কথা প্রচার করেন। ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় পাঁচ বছর (১৯৪০-৪৫) তিনি কংগ্রেস সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এই সময় তিন বছর তিনি কারারুদ্ধ ছিলেন। যে সকল ভারতীয় মুসলমান মুসলমানদের জন্য পৃথক পাকিস্তান রাষ্ট্রের দাবির বিরোধিতা করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব ছিলেন মৌলানা আজাদ। তিনি ভারতের অন্তর্বর্তী সরকারেও মন্ত্রীত্ব করেন। দেশভাগের অব্যবহিত আগে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় তিনি হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতির প্রচেষ্টা চালান। স্বাধীন ভারতের শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে তিনি বিনামূল্যে প্রাথমিক শিক্ষা ও উচ্চশিক্ষার জন্য আধুনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি চালু করেন। তিনিই ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন স্থাপন করেন।