জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমিজালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমি


মাওলানা জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমি (১২০৭ — ১২৭৩), মাওলানা জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ বাল্‌খি নামেও প্ররিচিত, কিন্তু বিশ্ব তাকে সংক্ষেপে রুমি নামে জানে। তিনি ত্রয়োদশ শতকের একজন ফার্সি কবি, ধর্মতাত্ত্বিক এবং সুফি দর্শনের শিক্ষক ছিলেন। রুমি খোরাসানের (বর্তমান আফগানিস্তান) বলখ শহরে ১২০৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর (৬০৪ হিজরি ৬ই রবিউল আউয়াল) জন্মগ্রহন করেন । তাঁদের পরিবার ছিল বিশিষ্ট আইনজ্ঞ ও ধর্মতত্তবিদ পরিবার। তার পিতা বাহাউদ্দিন ওয়ালাদকে সমসাময়িক "পন্ডিতদের সুলতান" বলে আখ্যায়িত করেছিল। রুমির পিতা ছিলেন একজন বিখ্যাত ধর্মতত্তবিদ, সুফি এবং অতীন্দ্রিয়বাদি যার সাহস, সাধুতা, অন্তরের মহত্ত এবং ঈশ্বরের প্রতি দার্শনিক বা মৌল অভিগমনের পরিবর্তে সরাসরি আধ্যাতিকভাবে সমীপবর্তী হওয়ার বাসনা রুমিকে ভীষণভাবে প্রভাবিত এবং অনুপ্রাণিত করেছিল। রুমি যে যুগে জন্মগ্রহন করেন তখন ভয়াবহ এক আলোড়ন চলছিল। অটোম্যান সাম্রাজ্য ভিতরে এবং বাইরে থেকে আক্রান্ত ছিল; ভিতরে ছিল খ্রিষ্টান আক্রমনকারিরা এবং অপর দিক থেকে চেঙ্গিস খানের মোঙ্গল বাহিনী। এই সামাজিক-রাজনৈতিক আলোড়ন রুমিকে তরুনকাল থেকে আতঙ্ক ও বিশৃংখলা দারা দহন করেছিল। ধর্মীয় বিরুদ্ধবাদীদের বিড়োধিতা এবং সম্বাব্য মোঙ্গল আক্রমণের আশঙ্কায় ১২১৯ খ্রিষ্টাব্দে মাত্র বার বৎসর বয়সে রুমি তার পিতাসহ বলখ ত্যাগ করেন। বাহাউদ্দিনের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল। এক বৎসর পরেই বলখ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। তার দশ বৎসর ধরে এশিয়া মাইনর অ আরবে পরিভ্রমন করেন। মক্কার পথে রুমি এবং তার পরিবার নিশাপুরে অবস্থান করেন, সেখানে তাঁদের সাথে বিখ্যাত সুফি কবি আত্তারের সাক্ষাত হয়। আত্তার রুমি সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, "এই বালকটি ভালবাসার অন্তরে একটি দ্বার উদ্ঘাটন করবে। "রুমিও কখনও আত্তারকে ভুলতে পারেনি, রুমি আত্তার সম্পরকে বলেছেন" আত্তার ভালবাসার সাতটি নগরই ভ্রমন করেছেন আর আমি এখনও একটি গলির প্রান্তে অবস্তান করছি। " তার পিতার সঙ্গে ভ্রমনের আরেক পর্যায়ে রুমি দামাস্কাস যান । সেখানে সে যুগের শ্রেস্ট দার্শনিক ইবনুল আরাবীর সাথে দেখা হয় । শোনা যায় ইবনুল আরাবী যখন রুমিকে তার পিতার পিছনে হাঁটতে দেখেন তখন বলেছিলেন " ঈশ্বরের কি মহিমা, একটি হ্রদের পিছনে এক সমুদ্র যাচ্ছে ।" আঠারো বছর বয়সে রুমি সমরখন্দের এক অমাত্যের কন্যা গওহর খাতুনকে বিবাহ করেন এবং কিছুদিনের মধ্যে দুই পুত্র সুলতান ওয়ালদ ও আলাউদ্দিন তিলবির পিতা হন। লারান্দা এবং আর্মেনিয়ার আরজানজানে কিছুদিন অবস্থান করার পর রুমির পিতা কোনিয়ার সুলতান আলাউদ্দিন কায়কবাদ দ্বারা আমন্ত্রিত হন। তখন ১২২৯ খ্রিষ্টাব্দ। কোনিয়ায় বাহাউদ্দিন ওয়ালাদ্দের জন্য বিশেষভাবে এক বিদ্যাপীঠ প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং ১২৩১ খ্রিষ্টাব্দে তার মৃত্যু পর্যন্ত তিনি সেখানে শিক্ষাদান করেন। পরবর্তীকালে মাত্র চব্বিশ বৎসর বয়সে রুমি সেই বিদ্যাপীঠে তার পিতার উত্তরসূরী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হন।